হাতিল গ্রুপ- টিম্বার শপ থেকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার গল্প

হাতিল গ্রুপ- টিম্বার শপ থেকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার গল্প

আমরা যখন বাড়িতে ফার্নিচার কিনি, তখন আমরা চাই এগুলো যেন প্রয়োজনীয়তা পূ্রণের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সুন্দর ও আরামদায়ক করে তোলে। এমন কিছু ব্র্যান্ড আছে, যারা এই চাহিদার মাথায় রেখে কাজ করে থাকে। আর তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ব্র্যন্ড হলো হাতিল গ্রুপ। আজ আমরা কথা বলবো তাদের এই অসাধারণ যাত্রার শুরু, ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে।

হাতিলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে, যখন হাতিল কম্পোজিট ডোর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি ছোট উদ্যোগ চালু করেছিলেন সেলিম এইচ রহমানের পরিবার। তখন এটি ছিল মূলত একটি দরজা ও কাঠের কাজের প্রতিষ্ঠান। তখন তারা সম্ভবত জানতেন না যে, এই ছোট উদ্যোগ একদিন বাংলাদেশের অন্যতম বড় ফার্নিচার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তবে তাদের এই ছোট উদ্যোগ আজ বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের ছাপ রেখেছে। 

সময়ের সাথে সাথে, হাতিল শুধু দরজা ও কাঠের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাদের ইচ্ছা ছিল ফার্নিচার দিয়ে প্রয়োজন পূরনের পাশাপাশি এটিকে জীবনযাত্রার মান এবং রুচির পরিচায়ক করে তোলা। ২০০৫ সালে, তারা এই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে হাতিল ফার্নিচার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকেই একটি বিশ্বমানের ফার্নিচার ব্র্যান্ড গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে তাদের পথচলা শুরু হয়।

আসবাবপত্র কেনার সময় আমাদের সবার মনে প্রশ্ন থাকে এটি দীর্ঘদিন টিকবে কিনা। হাতিল জানে, এই প্রশ্নের উত্তর হলো গুণগত মান। তারা বিশ্বাস করে, ভালো মানের কাঠ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন ফার্নিচার বানানো সম্ভব।

তারা চেয়েছিল বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও তাদের পণ্যকে প্রিমিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এবং এই কারনে তারা আন্তর্জাতিক মানের কারিগর ও ডিজাইনকে সমন্বিত করেছে। হাতিলের প্রতিটি ফার্নিচারের পেছনে থাকে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কাঠের প্রক্রিয়াজাতকরণ, শুষ্কীকরণ এবং পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া। আর তাই  হাতিলের প্রতিটি ফার্নিচার হয়ে ওঠে টেকসই, দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক জীবনযাত্রার উপযোগী।

হাতিল শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সময়ের সাথে তারা পৌঁছে গিয়েছে ভারত, ভুটান, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও।

বর্তমানে হাতিলের রয়েছে ৮০টিরও বেশি শোরুম এবং ১০০+ ডিলার পয়েন্ট, যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য তারা পেয়েছে ISO 9001:2015 এবং ISO 14001:2015 সার্টিফিকেশন।

এই সফলতার অন্যতম কারণ হলো ক্রেতাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। তারা জানে, মানুষের রুচি পরিবর্তন হয়, প্রয়োজন পরিবর্তন হয়, আর তাই নতুনত্ব আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ফার্নিচার বাজারে হাতিলের শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ। তবে তাদের এই শীর্ষস্থান অর্জন করতে হয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।

প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কম দামের প্রতিযোগিতার বাজার। বাংলাদেশে সস্তা পণ্যের প্রভাব এবং বাজারে প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র ছিল যে, একসময় তারা চিন্তা করছিল কীভাবে বাজারে টিকে থাকবে। তবে, হাতিলের জন্য এটি একটি সুযোগে পরিণত হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, গুণগত মান বজায় রেখে এবং অভিনব ডিজাইন দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করবে।

এছাড়া, কর্মশক্তি এবং দক্ষ কারিগরের অভাব ছিল আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তারা স্থানীয় শিল্পী এবং কারিগরদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

আজকালকার ক্রেতারা কেবল ফাংশনাল ফার্নিচারই চান না, তারা চান কিছু সুন্দর এবং স্টাইলিশ কিছু যা তাদের ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে। হাতিল এই চাহিদাকে মাথায় রেখে ইনোভেটিভ অনেক ডিজাইন তৈরি করেছে যেগুলি আধুনিক এবং ফিউচার ওরিয়েন্টেড। তাদের জনপ্রিয় ডিজাইনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, স্মার্ট সোফা, যা সহজেই বিছানায় রূপান্তরিত করা যায়। কমপ্যাক্ট ডাইনিং সেট, যা জায়গা বাঁচিয়ে ভাঁজ করে রাখা যায়। মাল্টিফাংশনাল অফিস ডেস্ক, যা বাড়ি এবং অফিস উভয়ের জন্য উপযোগী।

এই ধরনের উদ্ভাবনী ডিজাইন তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।

হাতিল শুধু ব্যবসায়িক লাভে নয়, পারিপার্শ্বিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতাতেও বিশ্বাসী। তারা ফার্নিচার তৈরিতে পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করে এবং টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। একই সাথে, তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

হাতিল আজ যেখানে পৌঁছেছে, তা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি ও সংকল্পের ফল। আর তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য হল আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া। আগামী দিনে তারা নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *